বুধবার ৭ মে ২০২৫ - ১২:৫৫
চিকিৎসায় নামাহারাম চিকিৎসকের শরয়ী সীমারেখা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী চিকিৎসাক্ষেত্রে শরীয়তের সীমারেখা নিয়ে একটি ইস্তিফতার (ধর্মীয় প্রশ্নোত্তর) উত্তর প্রদান করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী “চিকিৎসায় শরয়ী সীমারেখা” বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, যা আগ্রহী পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হলো:
 

চিকিৎসায় নামাহারাম চিকিৎসকের শরয়ী সীমারেখা

প্রশ্ন: নামাহরাম ব্যক্তির শরীরের ভেতরের অংশ (যা ত্বকের নিচে), চক্ষু, ক্যামেরা কিংবা আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে দেখা কি হারাম?

উত্তর: এতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে মুখের ভেতর দেখা— “এহতিয়াতে ওয়াজিব" (সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক) হিসেবে অনুচিত। অবশ্য, মুখের যে অংশ কথাবার্তার সময় স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়, তা দেখা জায়েয (বৈধ)।

প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা: শিয়া মাজহাব তথা জাফরী ফিকাহ অনুযায়ী, চিকিৎসায় শরয়ী সীমারেখা নিয়ে যে ইস্তিফতা বা ধর্মীয় মতামত প্রকাশ পেয়েছে, তা মূলত "ضرورت" (প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতা) ও "حرمت نظر" (হারাম দৃষ্টি) এর মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দেওয়া হয়।

১. নামাহরাম পুরুষ বা নারীর শরীর দেখা সাধারণত হারাম —

শিয়া মাজহাবের ফিকাহ মতে, একজন পুরুষের জন্য নামাহরাম নারীর এবং নারীর জন্য নামাহরাম পুরুষের শরীরের এমন অংশ দেখা যা সাধারণত ঢাকা থাকে (আওরাত), তা হারাম, যদি না চরম প্রয়োজন বা বিপদের কারণ থাকে।

২. চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অনুমোদিত হয় —

যখন চিকিৎসার জন্য এই দৃষ্টি অপরিহার্য হয়, এবং বিকল্প কোনো মহিলা চিকিৎসক (মহিলার জন্য) বা পুরুষ চিকিৎসক (পুরুষের জন্য) না পাওয়া যায়, তখন এই দৃষ্টিকে জায়েয (বৈধ) ঘোষণা করা হয়, কারণ এখানে জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার পায়। এই নিয়মকানুন "الضرورات تبیح المحظورات" অর্থাৎ "প্রয়োজন নিষিদ্ধ বস্তুকে বৈধ করে" নীতির অন্তর্ভুক্ত।

৩. আভ্যন্তরীণ অংশ দেখা (যেমন: স্ক্যান, সোনোগ্রাফি) —

শরীরের যে অংশ দেখা সাধারণত হারাম, তা যদি স্ক্যান বা ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়, তবে শিয়া মাজহাবে এটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ হতে পারে, যদি এতে যৌন আবেদন না থাকে এবং কেবল চিকিৎসা উদ্দেশ্যে হয়।

৪. মুখগহ্বরের ব্যতিক্রম (احتیاط واجب) —

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, মুখের ভিতর দেখা উচিত নয়—এটি “এহতিয়াতে ওয়াজিব" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো, অনুসারীদের উচিত এই বিষয়ে সতর্ক থাকা, যতক্ষণ না বিকল্প পাওয়া যায়। তবে যেটুকু অংশ মুখে সাধারণ কথাবার্তার সময় দেখা যায়, সেটুকু দেখা জায়েয।
 

পরিশেষ, শিয়া মাজহাবে চিকিৎসাক্ষেত্রে দৃষ্টি বা স্পর্শের হারাম হওয়া বা না হওয়া মূলত:

- চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

- বিকল্পের অনুপস্থিতি

- যৌন উদ্দেশ্য না থাকা

- সর্বনিম্ন সীমায় সীমাবদ্ধ থাকার উপর নির্ভর করে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha